Wednesday 21 November 2018

আমি এক যাযাবর - ভূপেন হাজারিকা (১৯২৬ - ২০১১)

আমি এক যাযাবর, আমি এক যাযাবর
পৃথিবী আমাকে আপন করেছে, ভুলেছি নিজের ঘর।।

আমি গঙ্গার থেকে মিসিসিপি হয়ে ভলগার রূপ দেখেছি
অটোয়ার থেকে অস্ট্রিয়া হয়ে প‌্যারিসের ধূলো মেখেছি
আমি ইলোরার থেকে রং নিয়ে দূরে শিকাগো শহরে দিয়েছি
গালিবের শের তাশখন্দের মিনারে বসে শুনেছি।।

মার্ক টোয়েনের সমাধিতে বসে গোর্কির কথা বলেছি
বারে বারে আমি পথের টানেই পথকে করেছি ঘর
তাই আমি যাযাবর, তাই আমি যাযাবর।।

বহু যাযাবর লক্ষ্যবিহীন, আমার রয়েছে পণ
রঙের খনি যেখানে দেখেছি, রাঙিয়ে নিয়েছি মন
আমি দেখেছি অনেক গগনচুম্বী অট্টালিকার সারি
তার ছায়াতেই দেখেছি অনেক গৃহহীন নরনারী
আমি দেখেছি অনেক গোলাপ-বকুল, ফুটে আছে থরে থরে
আবার দেখেছি না ফোটা ফুলের কলিরা, ঝরে গেছে অনাদরে
প্রেমহীন ভালোবাসা বেসে বেসে, ভেঙ্গেছি সুখের ঘর।।
পথের মানুষ আপন হয়েছে, আপন হয়েছে পর
তাই আমি যাযাবর, আমি এক যাযাবর।।

ভূপেন হাজারিকা (১৯২৬ - ২০১১)

Saturday 25 March 2017

***কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া***



কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া
আমার ভাইধন রে কইয়ো, নাইওর নিতো বইলা
তোরা কে যাস কে যাস…।।

বছর খানি ঘুইরা গেল, গেল রে
ভাইয়ের দেখা পাইলাম না, পাইলাম না

কইলজা আমার পুইড়া গেল, গেল রে
ভাইয়ের দেখা পাইলাম না, পাইলাম না
ছিলাম রে কতই আশা লইয়া
ভাই না আইলো গেল গেল, রথের মেলা চইলা
তোরা কে যাস কে যাস……

প্রাণ কান্দে , কান্দে
প্রান কান্দে কান্দে প্রান কান্দে রে, প্রান কান্দে
নয়ন ঝরে ঝরে নয়ন ঝরে রে, নয়ন ঝরে
পোড়া মনরে বুঝাইলে বুঝে না
কান্দে কান্দে প্রান কান্দে

সুজন মাঝিরে ভাইরে কইয়ো গিয়া
না আসিলে স্বপনেতে দেখা দিত বইলা
তোরা কে যাস কে যাস……

সিঁন্দুরিয়া মেঘ উইড়া আইলো রে
ভাইয়ের খবর আনলো না, আনলো না
ভাটির চরে নৌকা ফিরা আইলো রে
ভাইয়ের খবর আনলো না, আনলো না

নির্দয় বিধি রে তুমিই সদয় হইয়া
ভাইরে আইনো নইলে আমার পরান যাবে জ্বইলা
তোরা কে যাস কে যাস……

কে যাস রে ভাটি গাঙ বাইয়া
আমার ভাইধন রে কইয়ো, নাইওর নিতো বইলা
তোরা কে যাস কে যাস |


শিল্পীঃ চন্দনা মজুমদার
সুরকারঃ শচীন দেব বর্মণ
গীতিকারঃ মীরা দেব বর্মন
বছরঃ ১৯৭১

Friday 18 November 2016

তুমি কি দেখেছ কভু জীবনের পরাজয়?


তুমি কি দেখেছ কভু
জীবনের পরাজয়?
দুঃখের দহনে, করুন রোদনে,
তিলে তিলে তার ক্ষয়।

আমি তো দেখেছি কত যে স্বপ্ন
মুকুলেই ঝরে যায়।
শুকনো পাতার মর্মরে বাজে
কত সুর বেদনায়।

আকাশে বাতাসে নিষ্ফল আশা
হাহাকার হয়ে রয়।

প্রতিদিন কত খবর আসে যে
কাগজের পাতা ভরে,
জীবন পাতার অনেক খবর
রয়ে যায় অগোচরে।

কেউ তো জানে প্রাণের আকুতি
বারে বারে সে কি চায়।
স্বার্থের টানে প্রিয়জন কেন
দূরে সরে চলে যায়।

ধরণীর বুকে পাশাপাশি তবু
কেউ বুঝি কারো নয়।





গান: তুমি কি দেখেছ কভু
শিল্পী: আব্দুল জব্বার
সুরকার: সত্য সাহা
ছায়াছবি: এত টুকু আশা (১৯৬৮)

Friday 7 October 2016

আমাকে আমার মতো থাকতে দাও

আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
আমি নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি
যেটা ছিলনা ছিলনা সেটা না পাওয়াই থাক
সব পেলে নষ্ট জীবন

তোমার এই দুনিয়ার ঝাপসা আলোয়
কিছু সন্ধ্যের গুড়ো হওয়া কাঁচের মতো

যদি উড়ে যেতে চাও তবে গা ভাসিয়ে দাও
দূরবীনে চোখ রাখবোনা
না না না না ...

এই জাহাজ মাস্তুল ছারখার
তবু গল্প লিখছি বাঁচবার
আমি রাখতে চাই না আর তার
কোনো রাত দুপুরের আবদার
তাই চেষ্টা করছি বারবার
সাঁতরে পার খোঁজার

কখনো আকাশ বেয়ে চুপ করে
যদি নেমে আসে ভালবাসা খুব ভোরে

চোখ ভাঙ্গা ঘুমে তুমি খুঁজোনা আমায়
আশে পাশে আমি আর নেই

আমার জন্য আলো জ্বেলোনা কেউ
আমি মানুষের সমুদ্রে গুনেছি ঢেউ

এই স্টেশনের চত্বরে হারিয়ে গেছি
শেষ ট্রেনে ঘরে ফিরবো না না
না না ...........

তোমার রক্তে আছে স্বপ্ন যত
তারা ছুটছে রাত্রি দিন নিজের মতো
কখনো সময় পেলে একটু ভেবো
আঙ্গুলের ফাঁকে আমি কই ?

হিসেবের ভিড়ে আমি চাইনা ছুঁতে
যত শুকনো পেয়াজ-কলি ফ্রীজের শীতে
আমি ওবেলার ডালভাত ফুরিয়ে গেছি
বিলাসের জলে ভাসবো না না
না না না .....

এই জাহাজ মাস্তুল ছারখার
তবু গল্প লিখছি বাঁচবার
আমি রাখতে চাই না আর তার
কোনো রাত দুপুরের আবদার
তাই চেষ্টা করছি বারবার
সাঁতরে পাড় খোঁজার......

Saturday 20 August 2016

আগে যদি জানতাম তবে মন ফিরে চাইতাম

আগে যদি জানতাম তবে মন ফিরে চাইতাম
এই জ্বালা আর প্রাণে সহে না
ও মন রে…
কিসের তরে রয়ে গেলি তুই !

বলেছিলি তুই যে আমায়
আমি নাকি ভুলে যাবো
ভুলে আমি ঠিকই তো যেতাম,
পোড়া মনে তোরই কথা
বারে বারে বেজে ওঠে ।।
তাই তোকে আর ভোলা হলো না রে
এই জ্বালা আর প্রাণে সহে না ।

আগে যদি জানতাম তবে মন ফিরে চাইতাম
এই জ্বালা আর প্রাণে সহে না

জানিনা কেনো যে আমায়
একা ফেলে চলে গেলি
ভুলেও কি মনে পড়ে না।
তোরই মতো কোনদিন
আমিও যে ভুলে যাবো
তবু এই জ্বালা প্রাণে সইবো না রে
এই জ্বালা আর প্রাণে সহে না।

আগে যদি জানতাম তবে মন ফিরে চাইতাম
এই জ্বালা আর প্রাণে সহে না

Thursday 4 August 2016

বাংলাটা ঠিক আসে না! ভবানীপ্রসাদ মজুমদার

ছেলে আমার খুব ‘সিরিয়াস’ কথায়-কথায় হাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।
ইংলিশে ও ‘রাইমস’ বলে
‘ডিবেট’ করে, পড়াও চলে
আমার ছেলে খুব ‘পজেটিভ’ অলীক স্বপ্নে ভাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।

‘ইংলিশ’ ওর গুলে খাওয়া, ওটাই ‘ফাস্ট’ ল্যাঙ্গুয়েজ
হিন্দি সেকেন্ড, সত্যি বলছি, হিন্দিতে ওর দারুণ তেজ।
কী লাভ বলুন বাংলা প’ড়ে?
বিমান ছেড়ে ঠেলায় চড়ে?
বেঙ্গলি ‘থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’ তাই, তেমন ভালোবাসে না
জানে দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।

বাংলা আবার ভাষা নাকি, নেই কোনও ‘চার্ম’ বেঙ্গলিতে
সহজ-সরল এই কথাটা লজ্জা কীসের মেনে নিতে?
ইংলিশ ভেরি ফ্যান্টাসটিক
হিন্দি সুইট সায়েন্টিফিক
বেঙ্গলি ইজ গ্ল্যামারলেস, ওর ‘প্লেস’ এদের পাশে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।

বাংলা যেন কেমন-কেমন, খুউব দুর্বল প্যানপ্যানে
শুনলে বেশি গা জ্ব’লে যায়, একঘেয়ে আর ঘ্যানঘ্যানে।
কীসের গরব? কীসের আশা?
আর চলে না বাংলা ভাষা
কবে যেন হয় ‘বেঙ্গলি ডে’, ফেব্রুয়ারি মাসে না?
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।

ইংলিশ বেশ বোমবাস্টিং শব্দে ঠাসা দারুণ ভাষা
বেঙ্গলি ইজ ডিসগাস্টিং, ডিসগাস্টিং সর্বনাশা।
এই ভাষাতে দিবানিশি
হয় শুধু ভাই ‘পি.এন.পি.সি’
এই ভাষা তাই হলেও দিশি, সবাই ভালোবাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।

বাংলা ভাষা নিয়েই নাকি এংলা-প্যাংলা সবাই মুগ্ধ
বাংলা যাদের মাতৃভাষা, বাংলা যাদের মাতৃদুগ্ধ
মায়ের দুধের বড়ই অভাব
কৌটোর দুধ খাওয়াই স্বভাব
ওই দুধে তেজ-তাকত হয় না, বাংলাও তাই হাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।

বিদেশে কী বাংলা চলে? কেউ বোঝে না বাংলা কথা
বাংলা নিয়ে বড়াই করার চেয়েও ভালো নিরবতা।
আজ ইংলিশ বিশ্বভাষা
বাংলা ফিনিশ, নিঃস্ব আশা
বাংলা নিয়ে আজকাল কেউ সুখের স্বর্গে ভাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসেনা।

শেক্সপীয়র, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, শেলী বা কীটস বা বায়রন
ভাষা ওদের কী বলিষ্ঠ, শক্ত-সবল যেন আয়রন
কাজী নজরুল- রবীন্দ্রনাথ
ওদের কাছে তুচ্ছ নেহাত
মাইকেল হেরে বাংলায় ফেরে, আবেগে-উচছ্বাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের বাংলাটা ঠিক আসেনা।

Monday 7 March 2016

এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর গল্প

এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধুর সাথে
সকাল-বিকেল বেলা
কত পুরনো-নতুন পরিচিত গান
গাইতাম খুলে গলা

কত এলোমেলো পথ হেটেছি দুজন
হাত ছিলনা তো হাতে
ছিল যে যার জীবনে দুটো মন ছিল
জড়াজড়ি একসাথে ।

কত ঝগড়া-বিবাধ, সুখের স্মৃতিতে 
ভরে আছে শৈশব
তোকে স্মৃতিতে স্মৃতিতে এখনও তো
ভালোবাসছি অসম্ভব !

কেন বাড়লে বয়স ছোট্ট বেলার 
বন্ধু হারিয়ে যায়,

কেন হারাচ্ছে সব, বাড়াচ্ছে ভিড়
হারানোর তালিকায় ?!

আজ কে যে কোথায় আছি
কোন খবর নেইত কারো !
অথচ তোর ওই-দুঃখ গুলোতে
অঃশ ছিল আমারও !

এই চলতি জীবন ঘটনাবহূল
দু-এক ইন্চি ফাঁকে,
তুইতো পাবিনা আমায়- আর
আমিও খুঁজিনা তোকে !

কত সুখ পাওয়া হয়ে গেল,
তোকে ভুলে গেছি কতবার

তবু শৈশব থেকে তোর গান যেন
ভেসে আসে বার বার ।

আজ চলতে শিখে গেছি
তোকে নেই কিছু প্রয়োজন !
তবু ভীষণ অপ্রয়োজনে-
তোকেই খোজেছে আমার মন !

তুই হয়ত ভালই আছিস,
আর আমি ও মন্দ নেই !
তবু অসময়ে এসে স্মৃতিগুলো বুকে-
আঁকিবুকি কাটবেই !

তুই কতদূরে চলে গেলি,
তুকে হারিয়ে ফেলেছি আমি
এই দুঃখটা হয়ে থাক,
এই দুঃখটা বড় দামী ।

কেন বাড়লে বয়স ছোট্ট বেলার 
বন্ধু হারিয়ে যায় ??!
কেন হারাচ্ছে সব, বাড়াচ্ছে ভিড়
হারানোর তালিকায় ??!!

সেই কোন কথা নেই মুখে
শুধু চুপচাপ বসে থাকা,
ছিল যার যার ব্যাথা তার তার বুকে
ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা !!

আমি ভাবিনি তখন ভুলেও এমন
দুজন দুদিকে যাবে,
বুঝিনি আমার হৃদস্পন্ধন
আমার অচেনা হবে !!

এই বিভক্ত পৃথিবীতে
বড় শক্ত বাধন ছিল

হল অহংকারের জয়
সেই বন্ধন ছিঁড়ে গেল !!

সেই অহংকারের খেলায় দুজনে
জিতে গেছি একসাথে,
প্রতি ইটের জবাব পাথরে দিয়েছি
বিজয়ের মালা হাতে !!

সেই বিজয়উল্লাস প্রতিদ্ধনিত-
মূর্ত আর্তনাদে,
আজ বুকের ভিতর মিষ্টি একটা 
শৈশব শুধু কাঁদে !!

আজ অবেলার অবসরে,
কেন লাগছে ভীষণ একা

কত হাজার বছর তোর হাতটাকে
হয়নিত ছুঁয়ে দেখা!!

কেন বাড়লে বয়স ছোট্ট বেলার
বন্ধু হারিয়ে যায় ?
কেন হারাচ্ছে সব, বাড়াচ্ছে ভিড়
হারানোর তালিকায় ?!

আমি কত-কতবার আঁকি তোর ছবি
অঘোর কল্পনাতে
আজও জলে যাই, আজও পুড়ে যাই
তোর দুচোখের অবসাদে ।

দেখ, নীল নীল নীল আকাশের মত
অনন্ত হাহাকার

আজ বুকের ভেতর ভাঙ্গছে-ভাঙ্গছে
ভেঙ্গে সব চুরমার !!

কোন শত্রুরও যেন প্রানের বন্দু
এমন দুরে না যায় ।

শোন বন্ধু কখনো কোন বন্ধুকে
বলোনা যেন বিদায় !

কেন বাড়লে বয়স ছোট্ট বেলার 
বন্ধু হারিয়ে যায় ??
কেন হারাচ্ছে সব, বাড়াচ্ছে ভিড়
হারানোর তালিকায় ?!